ড্রাগ বা বিভিন্ন নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহনের মাধ্যমে ত্রিপুরার বিশাল অংশের কিশোর এবং যুব সমাজ বর্তমানে অত্যন্ত ভয়ংকর ভাবে আক্রান্ত। ১২ বছর বয়সের কিশোর কিশোরী থেকে ৩০ বছরের যুবক যুবতীরা এ নেশার কড়াল গ্রাসে পতিত হয়ে বর্তমানে করুন পরিনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।
ড্রাগ বা নেশা গ্রহন যেমন একদিকে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত, পারিবারিক ক্ষতি হচ্ছে। আর্থিকভাবে পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। একটি সম্পূর্ণ প্রজন্ম শিক্ষা বিমুখ হয়ে যাচ্ছে, নেশা আসক্ত ছেলে মেয়েরা আবার বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। কোন রকম সামাজিক বন্ধন বা নিয়ম তারা মানছে না। আবার অন্য দিকে প্রত্যেক ড্রাগ বা নেশা আসক্ত ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের ভয়ংকর রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে ত্রিপুরায় এইডস রোগ বৃদ্ধির আন্যতম কারন শিরাপথে ড্রাগস গ্রহন করা। দেখা গেছে এ সব ব্যক্তিদের শতকরা বেশীর ২০% এর বেশী এইডস রোগে আক্রান্ত।
হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত আরো বেশী, সেটা প্রায় ২৪%। কয়েক বছর পূর্বে ত্রিপুরায় হেপাটাইটিস সি রোগ প্রায় ছিলই না। কিন্তু বর্তমানে এর প্রকোপ ভয়ংকর ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে । হেপাটাইটিস বি কিছুটা কম, কারন ত্রিপুরাতে অনেকেই ইতিমধ্যে হেপাটাইটিস বি টিকা নিয়ে নিয়েছে
এছাড়া হার্ট এর সংক্রমন, টিবি রোগের আক্রমন এবং লিভারের রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বিশাল সামাজিক, মানবিক, মানসিক এবং স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য হেপাটাইটিস
ফাউন্ডেশন অফ ত্রিপুরা গত কয়েকবছর ধরে রাজ্যব্যপী বিভিন্ন ধরনের কাজ করে চলছে।
ফাউন্ডেশনের সদস্যদের গত ২১ বছেরর সামাজিক ক্ষেত্রে কাজ করার ভিত্তিতে এবারে সুপরিকল্পিত ভাবে ২৩শে জানুয়ারী ২০২৪ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্ম দিন থেকে’ Anti Drugs Mission একটি সুসংহত প্রকল্পের সুচনা করা হচ্ছে।
পুরো রাজ্যে বিভিন্ন অনুষ্টানের মাধ্যমে আজকে এ প্রকল্পের কাজ সূচনা হচ্ছে এবং একটি দীর্ঘস্থায়ী মহাত্মাকাঙ্খী প্রকল্প রুপায়ন প্রতিভাত করার জন্য ফাউন্ডেশন বদ্ধ পরিকর।
এই Anti Drugs Mission- প্রকল্পের বেশ কয়েকটি সুপরিকল্পিত ভাগ রয়েছে যেগুলির মাধ্যমে এ প্রকল্প কে পুরো ত্রিপুরা রাজ্যে বাস্তবায়িত করা হবে। এর প্রধান অংশগুলি হলো:
১)Community Sensitization Program: সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিদেরকে ড্রাগসের কু-প্রভাব সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা চক্র, নাটক, প্রচার পুস্তিকা এবং প্রচার অভিযানের মধ্যদিয়ে সচেতন করার উদ্যোগ গ্রহন করা হবে।
২) মাদক সেবনকারীদের কাউন্সেলিং: নেশা আসক্ত ব্যক্তিদেরকে আলোচনার মাধ্যমে নেশামুক্তির পথ নির্দেশ করা হবে।
৩) পরিবারের সদস্যদের কাউন্সেলিং: পরিবারের সদস্যদের ড্রাগ এবং এর কুপ্রভাব এবং মুক্তির পথ সম্পর্ক অবগত করনো হবে।
8) ড্রাগ ব্যবহারকারীদের স্ক্রিনিং: যারা বিভিন্ন ধরনের ড্রাগ গ্রহন করেন তাদের HIV, Hepatitis B and Hepatitis C এবং আন্যান্য রোগের পরিক্ষা নিরিক্ষা করা হবে।
৫) চিকিৎসা সুবিধার সাথে ওষুধ ব্যবহারকারীর যোগসূত্র: পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার যথানুযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
৬) ড্রাগ ব্যবহারকারীর প্রধান স্ট্রিমিং: ড্রাগ গ্রহন কারীদের কে মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা গ্রহন করা হবে।
৭) স্টেক হোল্ডারদের মধ্যে সমন্বয়: যে সব সংস্থা ড্রাগ গ্রহনকারীদের সাহায্য করতে পারে তাদেরকে একসংগে যুক্ত করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
৮) মিডিয়া থেকে সাহায্য: পত্রিকা, টেলিভিশন এবং অন্যান্য সব মিডিয়ার সংগে ড্রগস প্রতিরোধে কাজ করা হবে।
৯) প্রেরণামূলক কার্যক্রম: বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কাজকর্ম যা ছেলে মেয়েদেরকে তাদের বর্তমান অবস্থান থেকে উত্তোরনের সাহায্য করে যেমন খেলাধূলা নাচগান ইত্যাদি ব্যবস্থা করা হবে।
১০) উৎকর্ষ কেন্দ্রঃ ভবিষ্যতে একটি Center of excellence প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রচেষ্টা করা হবে। এই
কেন্দ্রের বিভিন্ন ধরনের নেশায় আক্রান্তদের কাউন্সিলিং, চিকিৎসা, সামাজিক কাজে নিয়োগ এবং নেশা মুক্তির প্রচেষ্টা গ্রহন করা হবে।